সৈয়ব আহমেদ সিয়াম
শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০
শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
প্রতিবেশীর সুবিধা অসুবিধা
প্রতিবেশীর সুবিধা অসুবিধা
মুহাম্মাদ ফজলুল বারী
রাত এগারটা। আব্দুল করীম সাহেব অফিস থেকে ফিরেছেন। সারাদিনের কাজ শেষে খুব ক্লান্তি অনুভব করছেন, মাথাও খুব ব্যথা করছে। তাই খাওয়া-দাওয়া সেরে দ্রম্নত শুয়ে গেছেন।
তিনি শোওয়া মাত্রই পাশের বাসা থেকে বিরক্তিকর খট খট আওয়াজ শুরু হল; দেয়ালে কিছু একটা লাগানো হচ্ছে। তিনি কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করলেন। নাহ! বিরক্তিকর আওয়াজ। কিছুতেই ঘুমানো সম্ভব নয়। মাথা ব্যথাও ক্রমে বেড়ে চলেছে।
তিনি ছোট ছেলে হাসানকে ডাকলেন। বাবা হাসান! পাশের বাসায় গিয়ে আমাদের প্রতিবেশীকে একটু বল, সারাদিন কাজ শেষে আবক্ষু একটু ক্লান্ত, তার মাথাও ব্যথা করছে। দ্রম্নত শুয়ে গেছেন; কিন্তু আওয়াজের কারণে ঘুমাতে পারছেন না। দয়া করে যদি আপনাদের কাজটি সকালে করেন তাহলে ভাল হয়। হাসান যেতে উদ্যত হল তখন মা বললেন, বাবা! মনে রেখ তারা আমাদের প্রতিবেশী, আর প্রতিবেশীর উপর প্রতিবেশীর হক রয়েছে। সুন্দর ও নম্রভাবে বলবে, রাগারাগি করবে না।
হাসান পাশের বাসায় গিয়ে বেল চাপলো।
প্রতিবেশী মাজেদ : কে রে এত রাতে! কে?
হাসান : আমি হাসান, তোমাদের প্রতিবেশী।
মাজেদ : তা আমি ভালোভাবে জানি। তো এত রাতে কী কাজে এসেছ বলে ফেল জলদি।
হাসান : সারাদিন কাজ শেষে আবক্ষু একটু ক্লান্ত, তার মাথাও ব্যথা করছে। তিনি দ্রম্নত শুয়ে গেছেন... তোমাদের কাজটা সকালে করলে ভাল হয়।
মাজেদ : না! না!! এখনো পাঁচটি স্ক্রু লাগানো বাকি আছে। রাতেই সেটা শেষ করতে হবে। তুমি বাসায় যাও তো, ডিস্টটার্ব করো না; হাতে অনেক কাজ।
হাসান : কিন্তু...
মাজেদ : কোনো কিন্তু টিন্তু বুঝি না, আমাকে দ্রম্নত কাজ শেষ করতে হবে। যাও তো। যত্তোসব!
হাসান : কিন্তু আওয়াজের কারণে যে আবক্ষু ঘুমাতে পারছেন না।
মাজেদ : তাতে আমার কী! তাকে গিয়ে বল, এক গস্নাস গরম দুধ খেয়ে লেপ মুড়ি দিতে; দেখবে সুন্দর ঘুম এসে গেছে। (এই বলে মুখের উপর ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিল।)
হাসান : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!
হাসান গম্ভীর চোহারা নিয়ে বাসায় প্রবেশ করল।
মা জিজ্ঞেস করলেন : কীরে মন ভার কেন, কী হয়েছে?
হাসান : তারা কাজ বন্ধ করবে না।
মা : নিশ্চয় তুমি গিয়ে রাগারাগি করেছ। হাসান : না মা। আবক্ষু যা বলেছেন আমি তাই বলেছি। আর সে বলেছে...। সে বলেছে...।
মা : বল, কী বলেছে?
হাসান : সে বলেছে, তোমার আবক্ষুকে গিয়ে বল, এক গস্নাস গরম দুধ খেয়ে লেপ মুড়ি দিতে; দেখবে সুন্দর ঘুম এসে গেছে।
মা : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! এ কেমন কথা!
এরই মাঝে একটা ভারি বস্ত্ত দেয়ালে লাগাতে গিয়ে মাথায় পড়ে মাজেদের মাথা ফেটে গেছে। তার ছোট ভাই চিৎকার করতে করতে হাসানদের বাসায় ছুটে এসেছে। হাসানের আবক্ষা দৌড়ে গেলেন এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন।
হাসান মাকে বলল, আবক্ষু কেন তাকে হাসপাতালে নিল; ওর মাথা ফেটেছে ভালো হয়েছে। মা বললেন, ছি বাবা! এরকম কথা বলতে নেই। সে আমাদের প্রতিবেশী আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৫
নবীজী আরো বলেছেন, জিবরীল আ. আমাকে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে এত বেশি তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে মিরাছের অংশিদার বানিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৪) সে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে তাই বলে কি আমরা প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে যাব না।
হাদীস শরীফে এসেছে, আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন, তাদের একজন ঐ ব্যক্তি, যার একজন মন্দ প্রতিবেশী রয়েছে, সে তাকে কষ্ট দেয়। তখন ঐ ব্যক্তি ছবর করে এবং আল্লাহর ছাওয়াবের আশা রাখে। ...। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৩৪০
হাসান : জী আম্মু, আবক্ষু খুব ভালো কাজ করেছেন। আমিও তাকে হাসপাতালে দেখতে যাব।
মাজেদের মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো। সে এখন কিছুটা সুস্থতা অনুভব করছে। হাসান তাকে সালাম দিল। সালামের জবাব দিয়ে মাজেদ বলল, কেমন আছ ভাই হাসান! আল্লাহ আমাকে মাফ করুন। আমি প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়েছি। আমার ভুল হয়েছে! তোমরা আমাকে মাফ করে দিও। হাসান হেসে বলল, না ভাই! আল্লাহ তোমাকে দ্রম্নত সুস্থ করুন। সকলে বলল, আমীন।
ডাক্তার বললেন, তুমি নিশ্চয় পড়েছ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৩
আব্দুল করীম সাহেব বললেন, হাঁ মাজেদ তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ। আল্লাহ তোমাকে সহীহ বুঝ দান করুন। প্রতিবেশীর উপর প্রতিবেশীর অনেক হক রয়েছে এবং ইসলাম একে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। এমনকি প্রতিবেশী যদি অমুসলিমও হয় তবু তার হকসমূহ রক্ষা করতে হবে।
কী সেই হকসমূহ চাচা! (মাজেদের জিজ্ঞাসা)। আব্দুল করীম সাহেব বললেন, ১. তার সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা। ২. সদা তার সুবিধা অসুবিধার প্রতি খেয়াল রাখা। ৩. অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া ও সেবা করা। ৪. তার বিপদে পাশে দাঁড়ানো। ৫. তার দোষ-ত্রুটি খুঁজে না বেড়ানো; বরং গোপন করা। ৬. ঘরের ভেতর উঁকি না দেওয়া। ৭. তার কষ্টের কারণ না হওয়া। ৮. প্রতিবেশী প্রবাসে থাকলে তার পরিবারের খোঁজ-খবর রাখা। ৯. প্রতিবেশীর সন্তানদের সাথে দয়ার আচরণ করা।
মাজেদ বলল, জী চাচা! আমি এখন থেকে প্রতিবেশীর হক আদায়ে যত্নবান হব ইনশাআল্লাহ।
বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭
ছোট্ট সাঈফার স্বপ্ন
ছোট্ট সাঈফার স্বপ্ন
মাহমুদা বুশরা
মানুষ সবসময়ই নিজের চেয়ে উঁচু শ্রেণীর দিকে তাকায়। নিজের চেয়ে যারা ধনী তাদের দিকে তাকায়। তাদের মত হতে চায়। তাদের জীবনাচরণ অনুসরণ করতে চায়। ফলে তার চাহিদা ও অভাব আরো বেড়ে যায়। মনের কষ্ট বেড়ে যায়। যে কোনো মূল্যে সে তাদের মত হতে চায়। ফলে সে নিজ অবস্থার উপরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে যায়। ন্যায় অন্যায়ের কথা ভুলে যায়। আমাদের মাঝে অনেকেই এমন আছে। তারা নিজেকে খুব অসহায় মনে করে, ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু আমাদের সকলেরই উচিত উঁচু দালানে বসবাসকারী ব্যক্তিদের দিকে না তাকিয়ে আমার চেয়ে যে নিচের অবস্থায় আছে তার দিকে দৃষ্টি দেওয়া। আর এটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ছোট্ট খুকী সাঈফা। সে লেখা-পড়ায় ভাল। তার চেয়েও বেশি ভাল, কথা-বার্তা ও আচার আচরণে। সাঈফা যেমন মিষ্টি, তেমন ভদ্র। সে যেমন ছোট্ট তেমন তার স্বপ্নগুলোও ছোট ছোট। কিন্তু সেই স্বপ্নগুলো সাঈফার হৃদয়ের গণ্ডি কখনোই পেরুতে পারে না। তার মনের আশা আলোর মুখ দেখে না।
সে তার খালাতো বোন ফায়যাদের বাসায় মাঝে মাঝেই যায়। তার আব্বু বড় ব্যবসায়ী। ঢাকায় তাদের বিশাল বাড়ি আছে। বাড়ির সামনে ফুলবাগান। ফায়যার আলাদা পড়ার রুম। এগুলো দেখে সাঈফার মন চায়, তার একটা পড়ার ঘর হবে আর সে তার ঘরটাকে মনের মত করে সাজাবে। বাড়ির সামনে একটি ফুল বাগান করবে। সেখানে সে হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা আরো কতশত ফুলের গাছ লাগাবে।
কিন্তু আজো সাঈফার আশা পূর্ণতা পায়নি। কারণ সাঈফাদের তো বাড়িই নেই। তিন রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে তারা। সাঈফার আরো কিছু ইচ্ছে আছে। যেমন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়ানো। একদিন সাঈফা তার আব্বুকে বলতে শুনেছে, সাঈফাকে তো খুব নামী-দামী স্কুলে ভর্তি করে আমি তার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এতে সাঈফার ছোট্ট মনে কষ্ট অনুভূত হয়।
সাঈফার এ ধরনের কষ্টকে আরোও বাড়িয়ে দেয় তার স্কুল-বান্ধবী বড় লোকের একমাত্র দুলালী লিজা। সে প্রায়ই সাঈফাকে কাপড় পরিধান, টিফিনসহ নানা বিষয়ে লজ্জা দিতে কুন্ঠাবোধ করে না। আর লিজার কথায় সাঈফা লজ্জায় এতটুকু হয়ে যায়। কয়েকদিন পর সাঈফার আব্বু বললেন, মামনি চল তোমাকে নিয়ে বেড়িয়ে আসি। সাঈফার মনটা হঠাৎ খুশীতে ভরে ওঠে। সে অনেকদিন পর বেড়াতে যাবে। কিন্তু সাঈফার আব্বু ওকে যেখানে বেড়াতে নিয়ে গেলেন, দেখে সাঈফা হতবাক হয়ে গেল। এ আমাকে কোথায় নিয়ে এলেন আব্বু! সাঈফা ভেবেছিল আব্বু তাকে শিশুপার্ক অথবা চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবেন। কিন্তু এ কোন্ আজবখানা। মানুষ তো নয় সব যেন কঙ্কাল। পেটফোলা ছেলে-মেয়েগুলোর হাত পা একেবারে লিকলিকে। চারদিক নোংরা পরিবেশ। সাঈফার যেন দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। ছেলে-মেয়েগুলো সাঈফাকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে। যেন সাঈফা অন্য জগতের মেয়ে।
আব্বু বেশি কিছু বললেন না। শুধু বললেন, এটা বস্তি। এরকম বস্তি আরো আছে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে। এরা তোমারই মত ছেলে মেয়ে ও তোমার আব্বু-আম্মুর মত নারী-পুরুষই তাদের বাবা-মা। সাঈফার মত মেয়েদের এর চেয়ে বেশি কিছু বলার দরকার হয় না। বস্তির ছেলে-মেয়েদের কষ্ট দেখার পর সাঈফার মনে আর কষ্ট রইল না। সে মনে মনে বলল, হে আল্লাহ্! এতদিন আমি বুঝিনি। বুঝতে পারিনি। আমি মনে করেছি, আমার ছোট ছোট স্বপ্ন ও আশাগুলো পূরণ না হওয়ায় আমার মতো দুঃখী মানুষ এ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। অথচ আজ দেখলাম,আমার মতো হাজারো ছেলে-মেয়ে কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। হে মেহেরবান আল্লাহ্! আজ আমি বুঝেছি যে, আমাকে তুমি অনেক সুখে রেখেছ। অনেক শান্তিতে রেখেছ। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তার মনে পড়ে, সে আব্বুর মুখে শুনেছে, নবীজী বলেছেন, “তোমরা তোমাদের চেয়ে নিচের লোকদের প্রতি তাকাও,তোমাদের চেয়ে উঁচু শ্রেণীর লোকদের দিকে তাকিয়ো না। তাহলে তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিআমতকে তোমাদের কাছে তুচ্ছ মনে হবে না। (তোমাকে আল্লাহ যে নিআমত দিয়েছেন, তার উপর না-শোকরি আসবে না।) Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৬৩
সাইফা এবার বুঝলো, তাকে আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন। অনেক সুখে রেখেছেন। সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। বলল, আলহামদু লিল্লাহ! সাথে সাথে বস্তির মানুষদের দেখে সাঈফার অবুঝ হৃদয়ে দরিদ্র মানুষের প্রতি একটা ভালবাসা জন্ম নিল। সে তাদের জন্য কিছু করতে চায়। আল্লাহ্ যেন আমাদেরও সাঈফার মত সঠিক বুঝ দান করেন। নিজ নিজ অবস্থার উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার এবং নিজের সাধ্যের মধ্যে গরীব মানুষের জন্য কিছু করার তাওফিক দান করেন। আমীন!
খাস নওগাঁয় শিশু-কিশোরদের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান
খাস নওগাঁয় শিশু-কিশোরদের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শাফি, মাহিন, সুনান, আতিক সহ খাস নওগাঁর বেশ বেশি শিশু-কিশোর প্রতি শুক্রবার মহল্লার কি...

-
খাস নওগাঁয় শিশু-কিশোরদের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শাফি, মাহিন, সুনান, আতিক সহ খাস নওগাঁর বেশ বেশি শিশু-কিশোর প্রতি শুক্রবার মহল্লার কি...
-
প্রতিবেশীর সুবিধা অসুবিধা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী রাত এগারটা। আব্দুল করীম সাহেব অফিস থেকে ফিরেছেন। সারাদিনের কাজ শেষে খুব ক্লান্তি অনুভব করছে...
-
ছোট্ট সাঈফার স্বপ্ন মাহমুদা বুশরা মানুষ সবসময়ই নিজের চেয়ে উঁচু শ্রেণীর দিকে তাকায়। নিজের চেয়ে যারা ধনী তাদের দিকে তাকায়। তাদের মত হতে চায়।...